নিজেকে হ্যাকিং থেকে নিরাপদে রাখার সামগ্রিক উপায়
Hacking থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখার জন্য আমার জানা সকল উপায় আজকে আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। বেশি কথা বলে আপনার এবং আমার মূল্যবান সময় নষ্ট করতে চাই না, তাই সরাসরি মূল কথায় চলে যাচ্ছি।
Just ১টা কথা বলতে চাই, এখানে আমি যা কিছু বলতে যাচ্ছি তা সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়েই এই লেখাটি লিখছি।
মূল আলোচনায় আসা যাক-
একঃ
Password নির্বাচনে সতর্কতাঃ
সাধারনত যে ধরনের Password কখনোই নির্বাচন করবেন না-
- মোবাইল নাম্বার, গাড়ির লাইসেন্স নাম্বার ইত্যাদি।
- কোন কমন sentence.
- নিজের নাম কিংবা BF/GF এর নাম।
- জন্ম তারিখ।
Password নির্বাচনের কিছু টেকনিক-
- Password অবশ্যই বড় হতে হবে। ১০-১২ অক্ষরের হলে ভালো।
- Alphabetical word (Ex: A,B,C etc) গুলো capital letter ও small letter এ মিশিয়ে লিখুন।
- Alphabetical word (Ex: A,B,C etc) এবং Mathematical word (Ex: 1,2,3 etc) মিলিয়ে পাসওয়ার্ড গঠন করুন।
- পাসওয়ার্ড কে আরও শক্তিশালী করতে বিভিন্ন Symbol ব্যাবহার করুন।
দুইঃ
আমরা যখন কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করি, তখন সাধারণত সেইসব সাইটের ডানে-বামে-উপরে-নিচে-মাঝখানে অনেক Advertisement বক্স/লিঙ্ক দেখা যায়। এগুলো থেকে সবসময় নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করবেন।
বিশেষ করে যেসব Add বক্স/লিঙ্ক অনেক আকর্ষণীয় ও উজ্জ্বল রঙের হয়ে থাকে এবং এনিমেশন টাইপের হয় অর্থাৎ add গুলো এনিমেটেড ভাবে নড়াচড়া করে, সেইসব add লিঙ্ক/বক্সে কখনো ক্লিক করবেন না।
কারণ এগুলো বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই Phishing Page হয়ে থাকে। So, ক্লিক করলেন তো ধরা খেলেন।
আপনার কম্পিউটারের সকল পাসওয়ার্ড চলে যেতে পারে হ্যাকারের কাছে, কিংবা আপনার কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়তে পারে ভাইরাস কিংবা হ্যাকারের দেওয়া Crack ফাইল।
তাই এইসব advertisement থেকে নিজেকে ১০০ হাত দূরে রাখুন।
তিনঃ
এবার ইমেইল-এর কথায় আসা যাক।
আপনার Email এ যদি কখনো কোন Spam মেইল আসে তাহলে তা Open না করাটাই হলো বুদ্ধিমানের কাজ। আর যদি আপনি মনে করেন, সেই Spam মেইল আপনার একান্ত প্রয়োজনীয় এবং সেটি Open করতেই হবে, তাহলে Open করুন।
কিন্তু ২টি শর্তে। তা হলো-
- যদি আপনি দেখেন ওই Spam মেইলে কোনো কিছুর লিঙ্ক দেওয়া আছে, তাহলে সেই লিঙ্কে আপনি কিছুতেই ক্লিক করবেন না।
- আর যদি দেখেন সেই Spam মেইলের সাথে কোনো কিছু Attachment করা আছে, তবে ওই Attach ফাইলটাও কখনো ডাউনলোড করবেন না অর্থাৎ আপনার কম্পিউটারে Save করবেন না।
চারঃ
ফেসবুক, টুইটার ও অন্যান্য সোস্যাল নেটওয়ার্কিং এর ক্ষেত্রও একই ব্যাপার।
মোট কথা, আজকাল যে দিনকাল যাচ্ছে, এতে কাউকেই বিশ্বাস করা যায় না, আর আজকাল তো অনেকেই হ্যাকিং কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কম-বেশী জানে। অর্থাৎ বলা যায় হ্যাকারের সংখ্যা দিন-দিন বেড়েই চলেছে, আমাদের দেশের ছেলে-পেলেরাও সে ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেয়।
So, একটু সতর্ক থাকতে দোষ কি ভাই !!!
কাকে বিশ্বাস করবেন, বলেন ????
যা হোক মূল কথায় আসি।
- Facebook বা Twiter এ কেউ কোনো লিঙ্ক শেয়ার করলে তাতে একটু ভেবে-চিন্তে ক্লিক করবেন। কারণ সেটি Fake লিঙ্ক হতে পারে, অর্থাৎ Phishing Page লিঙ্ক।
- আর লিংক যাচাইয়ের জন্য http://vscan.novirusthanks.org/ এবং http://onlinelinkscan.com/ ক্লিক করুন।
আর মনে রাখবেন এই সব ক্ষেত্রে হ্যাকার হয়ে থাকে সেই লিঙ্ক শেয়ারকারী আপনার বন্ধুটিই।
এসব ফিশিং সাইট তৈরী করা এখন অনেক সহজ এবং অনেকেই তা করতে পারে।
পাচঃ
- Facebook এ আপনার দেওয়া সকল ইমেইল (Primary, Secondary) আইডি লুকিয়ে (Hide) রাখুন, যাতে কেউ সেগুলো দেখতে না পারে, এমনকি আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ডরাও যেন দেখতে না পারে।
- এছাড়া আপনার ফেসবুক ইউসার-নেইম (User name) add করেছেন কিনা তা দেখে নিন।
যদি User-Name add করা না থাকে তবে তা অ্যাড করে নিন।
কারণ আপনার অ্যাকাউন্ট কখনো হ্যাক হলে তা Recover করতে এই User-Name এর কোনো বিকল্প থাকবে না, যদি হ্যাকার আপনার Facebook/Twiter অ্যাকাউন্ট টি হ্যাক করার পর আপনার ওই অ্যাকাউন্ট এর ইমেল আইডিও পরিবর্তন করে দেয়।
আশা করি, ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন।
[বিঃদ্রঃ FB User-Name সাধারনত ২বার পরিবর্তন করা যায়। তাই আপনি আপনার User-name টি এমনিতেই ২বার পরিবর্তন করে নিবেন, যেন পরবর্তীতে হ্যাকার আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করলেও আপনার User-Name পরিবর্তন করতে না পারে। তখন আপনি আপনার User-Name দিয়েই আপনার অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। সেই নিয়মটি পরে কোন ১দিন আপনাদের শিখিয়ে দিব, এছাড়া আপনি নিজে চেষ্টা করলেও তা পারবেন।]
ছয়ঃ
ফেসবুক এ নতুন নতুন অনেক মজার মজার Application প্রতিনিয়ত আসছে। আমরা এসব Application দিদারসে ব্যাবহার করে যাচ্ছি।
একবারও ভাবি না, এইসব Application এ ডুকার সময় ওই Application আমাদের Permission চাই আমরা আমাদের সব ইনফর্মেশন তাদের দিতে আগ্রহী কিনা ??
আমরাও সাথে সাথে Allow বাটনে ক্লিক করে Permission দিয়ে দিই।
তাদের (Application Provider/হতে পারে হ্যাকার) কি দোষ !!!
তারা তো বলে-কয়েই আমাদের থেকে ইনফরমেশন চুরি করছে, আর আমরাই তো তাদেরকে আমাদের ইনফর্মেশন নেওয়ার অনুমতি দিয়ে দিচ্ছি। তাই না !!!
হাজারো Application এর ভিড়ে কোনটি আসল আর কোনটি নকল তা যাচাই করা আসলেই অনেক দুরূহ ব্যাপার। তাই আমার Suggestion থাকবে, কি দরকার ভাই এসব Application ইউজ করা ??
আগে জান বাঁচানো ফরজ, তারপর আনন্দ-ফুর্তি। ভুল বললাম ???
সাতঃ
- অনেক সময় কোনো কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার সাথে সাথে “login.php” বা “index.html” বা এই ধরনের যেকোনো .php কিংবা .html ফাইল সেভ করার জন্য নিজ থেকেই ১টা অপশন আসে, অর্থাৎ ১টা Dialogue Box আসে যেখানে এই ধরনের (.php বা .html) ফাইল সেভ করার জন্য অপশন আসে।
কারণ বেশীরভাগ সময়ে সেগুলো হ্যাকারের Crack ফাইল বা Virus ফাইল হয়ে থাকে।
আশা করি বিষয়টা বুঝাতে পেরেছি।
- আবার কিছু কিছু ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে আপনার Browser এর টুলবারে pop-up মেসেজ show করে।
তাই এই ধরনের pop-up মেসেজ টুলবারে দেখা দেওয়া মাত্র ওই ওয়েবসাইট থেকে বেড়িয়ে আসাটাই নিরাপদ ও বুদ্ধিমানের কাজ।
- এছাড়া যেকোনো Low-rated সাইটে খুব প্রয়োজন না পড়লে ঢুকবেন না।
আটঃ
Cyber Café এর কম্পিউটারে সাধারণত হ্যাকারের তৈরী Crack ফাইল থাকার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
এছাড়া সেই সাইবার-ক্যাফে কর্তৃপক্ষ চাইলে ইচ্ছাকৃত ভাবে আপনার লগ-ইন ইনফর্মেশন (পাসওয়ার্ড সহ) হাতিয়ে নিতে পারে, সেক্ষেত্রে আপনি টেরও পাবেন না।
অন্যের কম্পিউটারের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার, সেই ব্যাক্তির (যার কম্পিউটার আপনি ব্যাবহার করছেন) যদি হ্যাকিং সম্পর্কে পরাশুনা থাকে (যা হয়তোবা আপনি জানেনও না বা কল্পনাও করেননি, সেই ব্যাক্তি হ্যাকিং জানে), তাহলে সেই ব্যাক্তি সহজেই Crack ফাইল ব্যাবহার করে আপনার অ্যাকাউন্ট এর পাসওয়ার্ড পেয়ে যেতে সক্ষম। তাই আমি বলবো-
- Cyber Café বা অন্যের কম্পিউটার থেকে আপনার কোনো প্রয়োজনীয় অ্যাকাউন্ট এ লগ-ইন/প্রবেশ না করাটাই উত্তম।
এছাড়া আরেকটা বিষয় বলছি।
- কোনো অ্যাকাউন্ট এ লগ-ইন করার সময় কখনো “Remember My Password” দিবেন না।
এছাড়া পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসে যেকোনো হ্যাকার যেকোনো সময় আপনার কম্পিউটারে Crack ফাইল ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সেইসব পাসওয়ার্ড লুফে নিতে সক্ষম।
নয়ঃ
কোন নতুন অ্যাকাউন্ট (হতে পারে Email, Facebook) খুললে সেটির কিংবা পুরানো অ্যাকাউন্ট গুলোর “Account Settings” এর প্রতিটি অংশ ভালভাবে খতিয়ে দেখুন।
মানে,আমি বলতে চাচ্ছি আপনার যেকোনো অ্যাকাউন্ট এ ডুকে তার “Account Settings” অপশনের A-টু-Z অর্থাৎ শুরু-থেকে-শেষ প্রতিটি অপশন সঠিকভাবে set করে নিন। এতে আপনার অ্যাকাউন্টের Security অনেক বৃদ্ধি পাবে।
দশঃ
আপনার কি হ্যাকিং বিষয়ে আগ্রহ আছে, তাহলে আপনাকেই বলছি।
- কখনো কোন প্রকারের হ্যাকিং টুলস ব্যাবহার করবেন না। কারণ এইসব হ্যাকিং টুলস গুলো বিভিন্ন হ্যাকারদের তৈরী। আর সেইসব হ্যাকারের মন ভোলানো কথায় বিশ্বাস করে এইসব টুল ইউজ করলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। কারণ বেশীর ভাগ টুলস হলো নকল বা ফেইক। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় অপরের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে গিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টটিই হ্যাক হয়ে যায়।
এগারঃ
এবার একটু বাড়তি নিরাপত্তাঃ
এতক্ষন আপনাদের যা বললাম এর সবকটি মেনে চলুন, আর এর পাশাপাশি আরও বাড়তি কিছু জিনিস আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। নিচে ২টা লিঙ্ক দিলাম-
Link 1- https://addons.mozilla.org/en-US/firefox/addon/facebook-phishing-protector/?src=search
Link 2- https://addons.mozilla.org/en-US/firefox/addon/wot-safe-browsing-tool/
এই ২টি লিঙ্কই মোজিলা ফায়ারফক্স ব্রাউজারের জন্য প্রযোজ্য, এই ২টি লিঙ্কে আপনি ২টি Add-ons পাবেন। আপনার মোজিলা ফায়ারফক্স ব্রাউজার থেকে লিঙ্ক ২টি তে প্রবেশ করুন এবং এগুলো মোজিলা ফায়ারফক্স authority অনুমোদিত। তাই ভয় পাওয়ার কারণ নেয়, এবং অনেক বিশ্বস্ত।
প্রথম লিঙ্কটিতে দেওয়া Add-ons টি আপনাকে ফেসবুকের ফিশিং পেইজ এবং হ্যাকারের ইঞ্জেকশন অ্যাটাক থেকে অনেকটাই নিরাপদে রাখবে।
দ্বিতীয় লিঙ্কটিতে দেওয়া Add-ons টি যেকোনো ওয়েবসাইট ব্রাউজিং এর ক্ষেত্রে আপনার কাজে দিবে। এটি ফিশিং ওয়েবসাইট বা ফিশিং স্ক্রিপ্ট সনাক্তকরনের কাজ করে এবং আপনাকে সতর্ক করবে।
0 Comments